কথা বলার সমস্যায় থাকা শিশুদের বন্ধু কম

 




দীর্ঘস্থায়ী কথা বলার সমস্যা আছে—এমন শিশুদের অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব কম হয়। কথা বলায় সমস্যার কারণে তাদের পক্ষে সম্পর্ক বজায় রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। নতুন এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকেরা বলেছেন, এসব শিশুর ব্যাপারে মা-বাবা ও স্কুলশিক্ষকদের সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ৭ হাজার ৩৯০ জন শিশুর তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করেছেন। গবেষণাটি শিশুদের মনোস্বাস্থ্যবিষয়ক ‘জার্নাল অব চাইল্ড সাইকোলজি অ্যান্ড সাইকিয়াট্রি অ্যাডভান্সেস’ সাময়িকীতে গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়।

গবেষণাটির মূল তথ্য-উপাত্ত ‘নব্বই দশকের শিশু’ নামের একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা থেকে নেওয়া হয়। ‘নব্বই দশকের শিশু’ শীর্ষক গবেষণায় ১৯৯১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে জন্ম নেওয়া ১৪ হাজার শিশুর তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে এসব শিশু ও তাদের পরিবারের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিখ্যাত এই গবেষণার অপর নাম ‘এভন লংজিটিউডিনাল স্টাডি অব প্যারেন্টস অ্যান্ড চিলড্রেন’। এই তথ্য ভান্ডার থেকে তথ্য নিয়ে শিশুদের বেড়ে ওঠা-সংক্রান্ত অনেক গবেষণা ইতিমধ্যে হয়েছে।


ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার অন্তর্ভুক্ত শিশুরা আট বছর বয়সে কোনো না কোনো ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল। এসব শিশুর বয়স যখন ১০, ১১ ও ১৪ বছর হয়েছিল, তখন তাদের আচরণ ও বিষাদগ্রস্ততা পরিমাপ করা হয়।

মা-বাবা ও শিক্ষকদের কাছ থেকে গবেষকেরা জানতে পারেন, আট বছর বয়সে যেসব শিশুর দীর্ঘস্থায়ী কথা বলার সমস্যা শনাক্ত হয়, তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার সমস্যা দেখা দেয় ১১ বছর বয়সে। দীর্ঘস্থায়ী কথা বলার সমস্যায় থাকা শিশুরা সামাজিক, আবেগজনিত ও ব্যবহারজনিত অসুবিধারও মুখোমুখি হয়। প্রাপ্তবয়সেও তাদের নানা ধরনের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অনেক শিশুরই দীর্ঘস্থায়ী কথা বলার সমস্যা বা পারসিস্টেন্ট স্পিস ডিসঅর্ডার থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে তোতলানো। এই সমস্যার কারণে কিছু শিশুর কথা বলা শিখতে সমস্যা হয়। এই সমস্যায় থাকা শিশুরা এক ধ্বনিকে অন্য ধ্বনিরূপে উচ্চারণ করে। যেমন তারা ‘ন’-কে ‘ল’ বলে। শিশুর কথা মাঝেমধ্যে আটকে যায় বা কথা বলা হঠাৎ থেমে যায়।

হেলাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, এসব শিশুর অন্যের সঙ্গে যোগাযোগে ঘাটতি থাকে। তাদের সামাজিক দক্ষতাও কম দেখা যায়। এ কারণে তাদের বন্ধু কম হতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে মা-বাবার পাশাপাশি স্কুল কর্তৃপক্ষের সচেতনতা জরুরি।

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলেছেন, দীর্ঘস্থায়ী কথা বলার সমস্যা এবং সামাজিক, আবেগজনিত, ব্যবহারজনিত অসুবিধার মধ্যকার সম্পর্ক এই বার্তা দেয় যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে শিশুদের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি এই ধরনের শিশুদের যথাযথ সহায়তায় দিতে হবে।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url